শীতকালীন সবজি আগাম বাজারে তুলতে পারলেই বেশি লাভ , আর একটু দেরি হলেই বাজারে বেচতে হয় পানির দরে। এ কারণে বর্ষার পানি হাওর থেকে নামার সাথে-সাথেই কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের কৃষকেরা শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। লক্ষ্য একটায় ভরা মৌসুমের আগেই বেশি দামের বাজার ধরা।
নিকলী উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নিকলী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ২হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি চাষ হবে। তবে বেসরকারিভাবে এর লক্ষ্যমাত্রা আরও বেশি।উপজেলার নিকলী সদর ইউনিয়নের বড় হাওর, সিংপুর হাওর , ছাতিরচর হাওর ও দামপাড়া ইউনিয়নের হাওরে শাকসবজির চাষের প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত। এসব হাওরে মুলা , লালশাক , পালংশাক , ঢেড়শ , বেগুন , ফুলকপি , বাধাঁকপি , টমেটো , পুঁইশাক , ধনেপাতা , রসুন , পেয়াজ , করলা ও কাচামরিচের চাষ হয়।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার নিকলী সদরের বড় হাওর , দামপাড়া হাওর , জারুইতলা হাওর , গুরুই হাওরের কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে , সবজি চাষিরা শীতের সবজির চারা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ বিভিন্ন জাতের সবজির চারা খেতে লাগাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ জমি থেকে আগাছামুক্ত করতে নিড়ানি দিচ্ছেন। এ সময় নিকলী সদর ইউনিয়নের বড়হাটি গ্রামের চাষি আব্দুল মিয়ার (৫৫) সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন , ৯০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়েছেন পুরো জমিতেই তিনি বিভিন্ন ধরণের শীতকালীর শাকসবজি চাষ করছেন। একজন শ্্রমিকের মজুরি দিতে হয় ৪৫০ টাকারও বেশি তাই নিজেই ক্ষেতের নিড়ানির কাজে নেমে পড়েছি। দামপাড়া গোয়াল হাটি গ্রামের চাষি আহাদ আলী (৫০) জানান , তিনি এবার ৩৫ শতাংশ জমিতে ফুলকপির চাষ করছেন।শীতের আগে শীতকালীন সবজি বাজারে তোলা হলে ওই সবজির চাহিদা থাকে বেশি। ফলে সে গুলোর দামও বেশি পাওয়া যায়। তিনি আশা করছেন শীত আসার আগেই তিনি ফুলকপি বাজারে বিক্রির জন্য আনতে পারবেন। একই গ্রামের আমির উদ্দিন (৫৫) জানান তার ৫০ শতাংশ জমিতে এবার আলুর বদলে বেগুন চাষ করছেন। শীত আসার আগেই বেগুন বাজারে আনতে পারবেন। তখন প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হবে ৬০ টাকা কেজি , যা শেিতর সময় বাজারে ওই বেগুন বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে।
নিকলী সদর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান , নিকলীর চাষিদের বিশেষ নজর এখন শীতকালীন সবজির দিকে। হাওরের পানি কমে যাওয়ার পর থেকেই চাষিরা কোমরে গামছা বেঁেধ মাঠে নেমেছন। কে কতো ভালো ফসল ফলাতে পারে এর প্রতিযোগিতা রয়েছে চাষিদের মধ্যে। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া সবজি চাষের উপযোগী রয়েছে। কয়েক দফা বৃষ্টি হলেও সবজির কোনো ক্ষতি হবে না।
নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বেলায়েত হোসেন জানান , উপজেলায় ২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি চাষাবাদ হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ভালো থাকলে এবার বাম্পার ফলনের আশা করছি। এ লক্ষ্যে আমরা স্থানীয় কৃষকদের নানা রকম পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।
Leave a Reply