সরকার পতনের একদফা দাবিতে চলমান আন্দোলন জোরদার করছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে নানা তৎপরতা শুরু করছে দলটি। অক্টোবরে আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে। তার আগে নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে মরিয়া দলটি। দলীয় নেতা-কর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে যুক্ত করার চেষ্টা করছে। জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে দলটি মাঠে আছে। চূড়ান্ত আন্দোলনের পরিকল্পনাও গুছিয়ে এনেছে বিএনপি। এছাড়া কূটনীতিক তৎপরতাও বাড়িয়েছে।

গত ২৮ জুলাই রাজধানীতে মহাসমাবেশ করে দলটি। মহাসমাবেশে কয়েক লক্ষ নেতা-কর্মীর জমায়েত হয়। কিন্তু ২৯ জুলাই রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেও মাঠে থাকতে পারেনি বিএনপি। পুলিশ ও সরকার দলীয় অনুসারীদের বাধার মুখে জোড়ালো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি রাজপথের প্রধান বিরোধী দল। এ নিয়ে দলের মধ্যেও নানা আলোচনা হয়।

২৯ জুলাইয়ের ব্যর্থ কর্মসূচির পর ব্যাকফুটে চলে যায় বিএনপি। এ সময়ে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে কয়েকটি কর্মসূচি পালন করলেও উপস্থিতি ছিলো কম। নেতা-কর্মীরাও ঝিমিয়ে পড়ে। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনেও ভাটা পড়ে। ছোট বিরতির পর নতুন করে মাঠে নামছে বিএনপি। লক্ষ্য সরকার পতনের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবার। সেভাবেই পরিকল্পনা করছে বিএনপি।

নেতা-কর্মী চাঙ্গা করতে নানা কর্মসূচি ঘোষণাও করেছে বিএনপি। আন্দোলনে তরুণদের যুক্ত করতে ঘোষণা করেছে তারুণ্যের রোডমার্চ। জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালন করবে। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর তারুণ্যের রোডমার্চ শুরু হবে। ১৬ সেপ্টেম্বর রংপুর থেকে শুরু হয়ে সৈয়দপুর দশমাইল হয়ে দিনাজপুর পর্যন্ত যাবে রোডমার্চ। এর পরদিন ১৭ সেপ্টেম্বর বগুড়া থেকে সান্তাহার-নওগাঁ হয়ে রাজশাহী পর্যন্ত রোডমার্চ করবে বিএনপির এই তিন সংগঠন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে রোডমার্চ শুরু হবে। গন্তব্যে পৌঁছে আরেকটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হবে। মাঝপথে কয়েকটি পথসভা করবে। এতে তরুণ-যুবকদের ব্যাপক জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু বলেন, আমরা তিন সংগঠন রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছি। ধাপে ধাপে কর্মসূচি আসবে।

দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও সাজার প্রতিবাদে আগামী শুক্রবার ঢাকায় সমাবেশ করবে বিএনপি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করবে।

এদিকে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে বিএনপি। ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে তিন দিনের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। দেশের সকল মহানগরে লিফলেট বিতরণ করছে দলটির নেতা-কর্মীরা। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে, শেষ হবে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এসব কর্মসূচিতে দলের সিনিয়র নেতারা অংশ নিচ্ছেন। পথে পথে ঘুরে মানুষের কাছে যাচ্ছেন। বর্তমান সরকারের দুর্নীতির কথা জনগণের কাছে তুলে ধরছেন তারা।

এদিকে কূটনীতিক তৎপরতও বাড়িয়েছে বিএনপি। বুধবার ঢাকায় নিযুক্ত জার্মানির ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জ্যান জেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে করেছে। বুধবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। এর আগে গত সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করে। ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক বারিধারায় বৃটিশ হাইকমিশনারের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়।

দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভয়াবহ দানবীয় সরকার জগদ্দল পাথরের মতো জাতির ওপর চেপে বসে আছে। সবকিছু তছনছ করে ফেলেছে, যা কিছু অর্জন সব নষ্ট করে দিয়েছে। এখন সময় খুব কম। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ফ্যাসিবাদকে দূর করে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।