কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট থাকায় প্রায় পনের বছর ধরে প্রসূতি অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে করে হাওর বেষ্টিত নিকলী উপজেলার প্রসূতিরা কম খরচে সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের কার্যালয় সূত্র জানায়, অবেদনবিদ ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও প্রসূতি শল্যচিকিৎসক ডাঃ সেলিনা হক ২০০৮ সালে ডিসেম্বর মাসে দুই জনই বদলী হয়ে চলে যাওয়ার পর থেকেই এ পদ শূন্য । তখন থেকেই সেখানে প্রসূতি দের অস্ত্রোপচার বন্ধ। ইউ,সি নতুন ভবনটি চালু হয় ২০০৮ সালে একই বছর ১০ আগষ্ট থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৫টি প্রসূতি অস্ত্রোপচার করা হয়। এর পর থেকে অস্ত্রোপচার বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে লাখ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি অযত্নে পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে।
সরজমিনে মঙ্গলবার (৯ মে) দুপুরে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে গেলে দেখা যায় ওটি কক্ষটি তালা দেওয়া।এ সময় কথা হয় উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের ইয়াকুব মিয়া সাথে তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার (৪ মে) আমার স্ত্রীর সিজারের জন্য নিকলী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। ডাক্তার না থাকায় সিজার করাতে পারি নাই। পরে কিশোরগঞ্জে প্রাইভেট হাসপাতাল মেডিল্যাবে প্রায় ২০ হাজার খরচ করে সিজার করা হয়েছে। আমার টাকা ও সময় দুইটায় অপচয় হয়েছে। আসা যাওয়ার ঝুঁকি এবং র্দুভোগ ও ছিল অনেক ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, প্রসূতি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এ উপজেলা থেকে প্রতি বছর প্রায় পাঁচশতাধিক রোগীকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল, ময়মসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হয় শুধু সিজার করার জন্য।
নিকলী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক আয়াজ বলেন, জরুরি প্রসূতি সেবা ও অস্ত্রোপচার কার্যক্রম চালু থাকলে প্রসূতি মায়েরা বিনা খরচে নিরাপদে এখান থেকে চিকিৎসা নিতে পারতেন। মাসে ২০ থেকে ২৫টি সিজারিয়ান অপারেশন করা যেত। উপজেলা পর্যায়ে অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের বিনা খরচে সিজারিয়ান অপারেশন করানোর একমাত্র ভরসা ছিল নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
নিকলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপ বলেন, জরুরি প্রসূতি সেবা ফের চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ সেবা বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর শুধু টাকা অপচয় হচ্ছে না, প্রসূতি মায়েরা প্রাণ পর্যন্ত হারাচ্ছেন। আবার বে-সরকারি ক্লিনিকে গেলে সার্জনের অপারেশন চার্জ, ঔষুধ ও ক্লিনিক ভাড়াসহ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন নিকলীর অসহায় ও দরিদ্র রোগীরা।
নিকলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মুছাম্মৎ শাকিলা পারভিন জানান, ১৫ বছর ধরে নিকলীতে ডাক্তারের অভাবে প্রসুতি অস্ত্রোপচার হয়না, এটা দুঃখজনক। বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানাবো।
উপজেলা আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এম ও) ডাঃ সোহাগ মিয়া বলেন, অবেদনবিধ এবং প্রসূতি সার্জন, লোকবল সংকট ও যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকায়, শূন্য পদে লোক চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কয়েকবার লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। এ দুই পদে চিকিৎসক, লোকবল ও যন্ত্রপাতি সচল হলেই অস্ত্রোপচার শুরু হবে।
কিশোরগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: এস.এম তারেক আনাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিত চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম স্যার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছে। আশা করছি এ সমস্যার সমাধান হবে।
Leave a Reply